আজকে খুব ভোরে উঠলাম। একবার ভাবলাম সুফি যেহেতু ঢাকা নাই, আর একটু ঘুমিয়ে নেই, একা একা পার্কে যেয়ে কাজ নাই। সাড়ে ৬টা বাজতেই রমনা যাবার খুব ইচ্ছা হল। বারান্দায় বের হয়ে বাইরের দিকে তাকাতেই পার্কের গাছপাতা, ট্রাকের পাশে পড়ে থাকা শিঊলী ফুলগূলো দেখার জন্য মন হুহু করে উঠলো। এই দালান কোঠার ভেতর এমন একটা জায়গাই আছে যেখানে গেলে মাটিতে পড়ে থাকা শিঊলী দেখা যায়, ছাতিম গাছের গন্ধ পাওয়া যায়, একটু মন ভাল লাগে, সেইটা হল ঢাকার পার্কগুলো।
শাক সবজি কিনবো তাই কিছু টাকা, সাধের আইফোন, হাটার পোষাকে তৈরী হয়ে বের হয়ে গেলাম। বেশ খানিক হাটলাম। একটাও রিকশা নাই রাস্তায়। শুধু আমি ছাড়া কয়েকজন আমার মত হাটতে বের হয়েছে। এছাড়া রাস্তা গুলো ফাঁকা। প্রথমে একটু ভয় লাগছিলো। খানিক বাদে মনে হল আমি ঢাকাতে নাই। বিদেশে, অন্য কোনো শহরে। ফুরফুরে বাতাশে একা একা হেটে হেটে যাচ্ছি। মনে পড়লো একবার ঠিক এইরকম ভোরে একা একা অনেক ঘুরেছিলাম কলকাতায়। অনেক ঝাড়িও খেতে হয়েছিলো না বলে বের হবার জন্য।
এতো সুন্দর শীত শীত কিন্তু শীত না ভোরের সময়টা কেনো প্রতিদিন আসে না। বাংলা মটর মোড় পার হয়ে বেশ কিছুদুর যেয়েই হঠাৎ একটা রিকশা। টুপ করে উঠে গেলাম। একটু এগোতেই দেখি মসি ভাই (মসিউল আলম) বাজার নিয়ে ফিরছেন। যেতে যেতে অবাক হয়ে ভাবলাম এই ঢাকাতে একা ভোরের কোন স্মৃতি আমার নাই। আগে বাবার সাথে হাটতাম, তাও অনেক আগের কথা। এরপর কখনো মার সাথে কিন্তু তা গোনায় পড়ে না। একা একা বাদ, আশেপাশে দলও দেখি না। ঢাকাতে এখনো মেয়েরা ঘরেই থাকে। দুই দশজন স্বাধীন মনের মানুষ জোর করে যা করে শুধু ততটুকু। স্কুল কলেজে যাওয়া ছাড়া কদাচিৎ দেখি দল ধরে কিশোরী, তরুণীরা কোনো খাবার জায়গায় আড্ডা দিচ্ছে, বা ছবি তুলছে একা একা একটা মেয়ে সন্ধ্যা বেলা বা ভোরের বেলা ইচ্ছামত হেটে বেরাচ্ছে বা ঘুরতে বের হচ্ছে, কখনোই না। মেয়েরা রাস্তাঘাটে বাথরুমের অভাবে পানি পর্যন্ত খায়না।
এইসব ভাবতে ভাবতে এরমধ্যেই রাস্তা শেষ আমি পার্কে পৌছে গেলাম। গোড়ালির বেশ উপরে প্যান্ট পরে এই বিশাল দেহি মানুশটা আমি হাটি, সবাই এমনভাবে দেখে মনে হয় আমি বুঝি কাপড় না পরেই বের হয়েছি। সুফি বলে আমি নাকি পার্কের বিনোদন। কিন্তু তাও আমি সালোয়ার কামিজ পরে হাটবো না, আমার আরাম বলে কথা। আজকে দুইবার চক্কর দিলাম। ইচ্ছা করছিলো আরও হাটি, মা তাড়তাড়ি ফিরতে বলে দিয়েছে তাই ৪০ মিনিট হেঁটে ফিরলাম। ফেরার পথেও রিকশা নাই। কিছুদুর হেঁটে রিকশা পাওয়া গেলো। খালি রাস্তা দিয়ে ফিরছি। মনে হচ্ছে রাস্তা শেষ না হোক। আরও দূরে আমার বাসা হোক। আমি আরও একা একা চলি, আমার শহরে আমার মত চলি। বাঁচি আমার মত বাঁচি।
ঘরে এসে প্রমিলা ২০-২০ এর খবরে মনটা ভরে গেল. আমি বসে আছি সেদিনের জন্য যেদিন উপমহাদেশের ঘরে ঘরে জন্ম নেবে লক্ষ লক্ষ মালালারা.